গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর দুই দফা বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। এসব হামলা চালানো হয়েছে এমন একটি স্কুলে, যেখানে গৃহচ্যুত পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছিল।
স্থানীয় মেডিকেল ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছে, গাজা শহরের ফাহমি আল-জারগাওয়ি স্কুলে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয়। এই স্কুলটিতে শত শত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন, যারা বেইত লাহিয়া এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছিলেন, যেখানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তীব্র অভিযান চালাচ্ছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, স্কুল ভবনের দুটি শ্রেণিকক্ষ যেগুলো বসবাসযোগ্য কক্ষে রূপান্তর করা হয়েছিল, সেখানে আগুন লেগে গেলে অন্তত ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকের দেহ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
প্রত্যক্ষদর্শী রামি রফিক, যিনি স্কুলটির পাশে থাকেন, বিবিসিকে বলেন: “চারদিকে আগুন। আমি পুড়ে যাওয়া দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি। আমার ছেলে এই দৃশ্য দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, স্কুলের বিভিন্ন অংশে আগুন ধরে গেছে এবং মারাত্মকভাবে আহত মানুষদের উদ্ধার করা হচ্ছে।
স্থানীয় রিপোর্টে জানানো হয়েছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ আল-কাসিহ, যিনি গাজার উত্তরের হামাস পুলিশের তদন্ত বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি, তার স্ত্রী এবং সন্তানরা হামলায় নিহত হন।
স্কুলে হামলার কিছুক্ষণ আগেই, গাজা শহরের কেন্দ্রে আরেকটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় চারজন নিহত হন, জানিয়েছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এই দুটি হামলা গাজার উত্তরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে ঘটেছে। শুক্রবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার একজন চিকিৎসকের বাড়িতে তার ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জন নিহত হয়। ড. আলা আল-নাজ্জারের ১১ বছর বয়সী ছেলেটি আহত হয়, তার স্বামী হামদি আল-নাজ্জার গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছেন।
নিহত শিশুদের নাম: ইয়াহিয়া, রাকান, রাসলান, জিবরান, ইভ, রাইভাল, সাইদেন, লুকমান ও সিদরা। তাদের বয়স কয়েক মাস থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে।
এদিকে শনিবার খান ইউনিসে রেড ক্রসের দুই কর্মী বিমান হামলায় নিহত হন। নিহতরা হলেন ইব্রাহিম ঈদ (অস্ত্র দূষণ বিশেষজ্ঞ) ও আহমদ আবু হিলাল (রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষী)। রেড ক্রস জানিয়েছে, এই ঘটনা গাজায় বেসামরিক মৃত্যুর "অসহনীয় মাত্রা"র দিকে ইঙ্গিত করে এবং তারা আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
রবিবার, গাজায় বেসরকারিভাবে ত্রাণ সরবরাহের জন্য গঠিত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অনুমোদিত একটি বিতর্কিত সংস্থার প্রধান পদত্যাগ করেন। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জ্যাক উড এক বিবৃতিতে জানান, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা রক্ষার মানবিক নীতিমালা অনুসরণ করে এই প্রকল্প পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
ইসরায়েল গত ২ মার্চ গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে, যা টানা ১১ সপ্তাহ চলার পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কিছু ত্রাণ ঢুকতে দেয়।
ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাট জানিয়েছে, সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ৩৮৮টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে জাতিসংঘ বলছে, দৈনিক অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক ত্রাণ দরকার।
রবিবার মাদ্রিদে ২০টি দেশ ও সংস্থা গাজায় যুদ্ধ থামানোর উপায় নিয়ে বৈঠকে বসে। স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ না করলে তার উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণে প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৩,৯৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ১৬,৫০০ শিশু।