যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬,৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। সাময়িক আইনি বিরতির মধ্যেও হোয়াইট হাউসের চাপ ক্রমেই বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী, গবেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্বেগ পৌঁছেছে তুঙ্গে।
সম্প্রতি মার্কিন একটি ফেডারেল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নিষেধাজ্ঞায় সাময়িক স্থগিতাদেশ দিলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই আইনি স্বস্তি স্থায়ী নয়।আর এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সহস্রাধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এখনো ঝুঁকির মুখে।
সম্প্রতি এক মার্কিন ফেডারেল বিচারক হার্ভার্ডের পক্ষে দেওয়া সাময়িক আদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম চালু রাখতে নির্দেশ দিলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনিক এই বিরোধ এখনো চরমে। এটি হার্ভার্ড ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আরেকটি বহিঃপ্রকাশ।
আইনি লড়াইয়ে হার্ভার্ডের সতর্ক বার্তা
ব্লুমবার্গ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, হার্ভার্ডের ৬,৮০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা স্ট্যাটাস বাতিলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তার প্রতিক্রিয়া হবে "তাৎক্ষণিক ও মারাত্মক"।এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীরা। প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার জানান, এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থী ও গবেষকদের ভবিষ্যৎকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
হার্ভার্ডের পক্ষ থেকে আদালতে মামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফেডারেল বিচারক অ্যালিসন বোরোঘস সরকারের সিদ্ধান্তে সাময়িক স্থগিতাদেশ দেন এবং জানান, এই নিষেধাজ্ঞা বাতিলের অনুরোধ পর্যালোচনা করতে তিনি শিগগিরই শুনানি করবেন।
একইসঙ্গে বোরোঘস আরও একটি মামলার বিচার করছেন, যেখানে হার্ভার্ড যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ফেডারেল তহবিল আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেছে।
বিদেশি শিক্ষার্থী নিয়ে প্রশাসনের কড়া অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি বিরোধী মনোভাব এবং অন্যান্য বিষয় সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। এর পাশাপাশি, মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যসহ একাধিক অভিযোগ তদন্ত করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হার্ভার্ডের প্রায় ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদেশি, যারা প্রতিবছর কোটি কোটি ডলার টিউশন ফি প্রদান করে থাকেন। যদিও অনার্স পর্যায়ে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হয়, তবুও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের একটি বড় অংশ নিশ্চিত করে।
দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম বৃহস্পতিবার জানান, হার্ভার্ড যথাযথ তথ্য না দেওয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি সংক্রান্ত অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকেই হয় অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হবেন, না হয় তাঁদের বৈধ অভিবাসন স্ট্যাটাস হারাতে হবে।
এই অনুমোদন ফিরে পেতে হার্ভার্ডকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ছয় ধরনের তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গত পাঁচ বছরের শৃঙ্খলাভঙ্গের রেকর্ড ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ভিডিও ফুটেজ।
হার্ভার্ডের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইহুদি ও মুসলিমবিরোধী আচরণের কিছু ঘটনা ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট গারবার এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে আরও পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আদালতে হার্ভার্ড জানিয়েছে, তারা নিয়মিতভাবে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে আসছে, এমনকি বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সংক্রান্ত অতিরিক্ত তথ্যও দেওয়া হয়েছে।
বস্টনের মেয়রের প্রতিবাদ
বস্টনের মেয়র মিশেল উ শুক্রবার এই পদক্ষেপকে শহরের ওপর সরাসরি আঘাত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা গবেষণায় অবদান রাখার পাশাপাশি স্থানীয় নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও স্বেচ্ছায় অংশ নেন। উল্লেখ্য, মিশেল নিজেও হার্ভার্ড কলেজ ও আইন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
সতর্ক সংকেত স্পষ্ট
এই ঘটনাপ্রবাহ হার্ভার্ডের মতো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী-নির্ভর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত। সাময়িক আইনি সুরক্ষা মিললেও, প্রশাসনিক চাপ এবং নীতিগত পরিবর্তনের ঝুঁকি পুরোপুরি কাটেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির কী মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এবং প্রশাসনের অবস্থানের ওপর। তবে আপাতত, হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে অনিশ্চয়তার দড়িতে।