" বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে ভারতে নয়া আতঙ্ক, চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে নিলেন ড. ইউনূস "

বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে ভারতে নয়া আতঙ্ক, চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে নিলেন ড. ইউনূস

চীনকে কলকাতা থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার এবং আলিপুরদুয়ারের হাসিমারা বিমানঘাঁটি থেকে ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে পাকিস্তানিদের নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এমনটি দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া। এই ঘাঁটিটি ভারতের স্পর্শকাতর চিকেনস নেক এবং সিকিম-ভুটান ও তিব্বতের ত্রিমুখী অঞ্চলের খুব কাছে। 

খুলনা বিভাগের মোংলা বন্দরে তাদের পদচিহ্ন রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা কলকাতা থেকে প্রায় ১৮০ কিমি দূরে, যা শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতার দূরত্বের সমান। এটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন, যিনি সম্প্রতি বেইজিং সফরের সময় মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে প্রায় ৪০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন চীনের কাছ থেকে। 

মোংলা বন্দরের বিষয়ে ঘোষণাটি একটি যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যা সম্ভবত ওই বন্দরের একটি টার্মিনালে থাকা ভারতের আগেকার সুবিধাজনক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিবে। 'ভারত বহু বছর ধরে ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করেছে... তবে শেষ পর্যন্ত, চীনারা সফল হয়েছে এবং এখন তারা কলকাতার দোরগোড়ায়, বললেন একজন ভারতীয় কৌশলগত বিশ্লেষক।

ড. ইউনুস, যিনি শুক্রবার (৪ এপ্রিল) ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, তিনি পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীকেও ভারতের পূর্ব সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়ার পথ খুলে দিয়েছেন, অভিযোগ করে সংবাদমাধ্যমটি।


বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ২৭ মার্চ একটি নির্দেশনা জারি করে বলেছে, তাদের পাঁচজন সিনিয়র কর্মকর্তা পাকিস্তানে যাবেন জেএফ-১৭ হালকা মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিতে। যুদ্ধবিমানটি পাকিস্তান ও চীনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, এটি এমন কয়েকটি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান লালমনিরহাট বিমানবন্দরে মোতায়েনের পূর্বপ্রস্তুতি। এটি রংপুর বিভাগে অবস্থিত এবং আলিপুরদুয়ারের হাসিমারা বিমানঘাঁটি থেকে মাত্র ১২০ কিমি দূরে।

‘বহু বছর ধরে ভারত চিন্তিত ছিল চিকেনস নেক-এর উত্তরে চীনের উপস্থিতি নিয়ে। ভূরাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চিকেনস নেক বাংলাদেশ ও নেপালের মাঝখানের একটি সরু ভূখণ্ড, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডকে দেশটির উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করে।’

‘এখন, মোংলা বন্দরের মাধ্যমে চীন আরও দক্ষিণে পৌঁছে যাচ্ছে এবং পাকিস্তানিরা লালমনিরহাট বিমানবন্দরে এসে ভারতের গায়ে নিঃশ্বাস ফেলবে।’

বিভিন্ন কৌশলগত বিশ্লেষকরা বলেছেন, এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ড. ইউনুসের বৈঠকের জন্য ঢাকা থেকে প্রস্তাব গ্রহণ করাটা আশ্চর্যজনক ছিল।

‘ড. ইউনুস ভারতের উদ্বেগকে পাশ কাটিয়ে চীনের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন, ... এবং আমরা তাকে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবিতে তুলে নিজের প্রচারের সুযোগ দিয়েছি। এটা যুক্তিহীন,’ বললেন এক কূটনীতিক।

তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ করেন, যেখানে চট্টগ্রামে ৩৫ কোটি ডলারের চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে।

চীনের সঙ্গে ঢাকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্পষ্ট ছিল ওই বিজ্ঞপ্তিতে, যেখানে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও পুনর্গঠনের জন্য চীনের অংশগ্রহণের কথাও বলা হয়েছে — যা ভারত বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল এর কৌশলগত অবস্থানের কারণে।

বেইজিং ও ঢাকা সমুদ্রবিষয়ক আদান-প্রদান এবং সামুদ্রিক সহযোগিতার বিষয়ে সংলাপ আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

‘আমরা যেন ভুলে না যাই যে চীন কখনো একা আসে না... তারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে নিয়ে আসে, এবং সেটাই সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ,’ বললেন আরেকটি সূত্র।

তিনি উল্লেখ করেন, এই মাসের শেষদিকে ঢাকা-ইসলামাবাদ দ্বিপাক্ষিক নানা সরকারি কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে - যেমন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারের ঢাকা সফর এবং বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক।

তিনি আরও বলেন, ইউনূস -যিনি সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং ইসলামাবাদ সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সূত্রটি বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের নিয়মিত সামরিক মহড়ার মাধ্যমে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার কথাও তুলে ধরেন।

‘এটি ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার ঠিক সময় ছিল না। এবং যদি ধরে নিই যে এর পেছনে কোনও যুক্তি ছিল, তাহলে আমি বুঝি না কেন আমরা তাকে এত নরমভাবে গ্রহণ করলাম। আমাদের স্পষ্টভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করা উচিত ছিল,’ বললেন সেই সূত্র।

তবে ঢাকার একজন কৌশল বিশ্লেষক অন্য দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। ‘নয়াদিল্লি ঠিক কাজ করেছে প্রস্তাব গ্রহণ করে... এতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেশের অবস্থান ব্যক্ত করার সুযোগ পেয়েছেন, এবং তিনি সব বিষয় স্পষ্ট করেছেন,' বললেন ওই বিশেষজ্ঞ। 'এছাড়া, তিনি আমাদের প্রধান উপদেষ্টার মনোভাব সরাসরি বোঝার সুযোগও পেয়েছেন।’

ড. ইউনূসের মিডিয়া টিমের প্রচারণা, যে ভারত তার কাছে মাথা নত করেছে এবং পলাতক শেখ হাসিনার তথাকথিত দোষ স্বীকার করেছে। 



Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال