" শেখ হাসিনা হয়ে গেছে ওসামা বিন লাদেনের খালাতো বোন: রিজভী "

শেখ হাসিনা হয়ে গেছে ওসামা বিন লাদেনের খালাতো বোন: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমাদের দেশে ১২ কোটি ভোটার, তার মধ্যে শ্রমিক হচ্ছে ৭ কোটি ৩৫ লাখ। যারা ভোট দিয়ে আমাদের সরকার নির্বাচিত করে, যারা ভোট দিয়ে সরকার গঠন করে তারা বঞ্চিত, তারা নির্যাতিত, তারা অসহায়। 

কথায় কথায় তাদের ছাঁটাই করা হয়, তাদের আয় দিন দিন কমে যাচ্ছে, তাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে শ্রমিকরা তাদের সমাবেশ করার ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার পায়নি। তাদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়া হয়নি।

অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা বিল ২০২৩-একটি আইন করে শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার অধিকার শেখ হাসিনা বন্ধ করে দিয়েছে। যতটুকু আইন করা হয়েছিল, সেটি করা হয়েছিল মালিকের স্বার্থে, শ্রমিকদের স্বার্থে নয়। তাই আজ জুটমিল, চিনিকল, গার্মেন্টস শিল্পসহ প্রতিটি জায়গায় শ্রমিকরা জীবন দিচ্ছে। 

শেখ হাসিনার আমলে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালের বারান্দায় শ্রমিক নেতাদের জীবন দিতে হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) বরিশাল নগরীর সদর রোডস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর শ্রমিক দলের আহবায়ক ফয়েজ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেছেন, পোশাক শিল্পে নূন্যতম মজুরীর জন্য আন্দোলনে শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনী, শেখ হাসিনার র‌্যাব, শেখ হাসিনার পুলিশ গুলি চালিয়েছে। 

তারা গুলি চালিয়ে মহিলা শ্রমিক আঞ্জুমান আরা খাতুন, শ্রমিক জালাল উদ্দিন, শ্রমিক রাসেলকে হত্যা করেছে।

শেখ হাসিনার নির্দেশে সেদিন গুলিতে শুধু ছাত্র নয়, শুধু জনতা নয়, শ্রমিকদেরও রক্ত গেছে। সেই রক্তে রচিত হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের মহাবিপ্লব। যে আন্দোলনের শতাধিক শ্রমিক শহীদ হয়েছেন।

দেশে ক্রান্তিকাল এখনও শেষ হয়নি, আজও শ্রমিকদের আয় দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। আজ তাদের পরিবারে কোন খাবার নেই, তাদের সন্তানরা বই-খাতা কিনতে না পেরে স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কে দেখবে এদেরকে? কে দেখবে এদের পরিবারকে? 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে সিন্ডিকেট ছিল, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে হলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনেক টাকা গুনতে হতো। এর মধ্যে ছিল মাসুদ, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল আরও অনেক লোক। এই সিন্ডিকেটের কারণে শ্রমিকদের কষ্ট হতো। শ্রমিকরা জমিজমা, ঘর-বাড়ি বিক্রি করে ওই সিন্ডিকেটকে টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েও চাকরি পেতোনা। 

আজ তো সিন্ডিকেট থাকার কথা নয়, আজ কেন শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করবে! কেন আজ তারা অর্থাহারে-অনাহারে জীবন কাটাবে? আজ তো ফ্যাসিবাদ নেই, আজ তো সেই জুলুম নেই, তাহলে কেন আজ শ্রমিক ছাঁটাই হবে?

তিনি বলেন, ৫ আগষ্টের আন্দোলনের ফসল ড. ইউনূস সাহেবের সরকার। তাকে তো জনগণ যেখানে ভালো থাকবে, জনগণ যেভাবে চাল, ডাল, তেল কিনতে পারবে, জনগণ যেভাবে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, চিনি, লবণ কিনতে পারবে সেই ধরণের পরিস্থিতি-পরিবেশ তৈরি করতে হবে। 

কিন্তু যদি ড. ইউনূসের সরকার শুধু ছাঁটাই করেন, বেকারত্ব বৃদ্ধি করেন, কর্মসংস্থান শূন্য করেন তাহলে তো জনগণের আস্থা থাকবে না এই সরকারের প্রতি। আপনাকে জনগণের দিকে মনযোগ দিতে হবে।  

এসময় তিনি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি মানবতার করিডোর দিতে চান বার্মার রাখাইন রাজ্যে, যেখানে দুর্ভিক্ষ হচ্ছে। আপনি জনগণের কি আকাঙ্খা সেটি শুনবেন না। আপনি রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যাদের ছেলেরা জীবন দিয়েছে, যাদের ছেলেরা অদৃশ্য হয়ে গেছে, খুনের শিকার হয়েছে, সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলের কথা আপনি শুনবেন না। আপনি এককভাবে আপনার কয়েকজন অ্যাডভাইজার নিয়ে মানবতার করিডোর করবেন। সেখানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের নিরাপত্তা কোন জায়গায় যাবে সেটি জনগনের কাছে পরিস্কার না করে আপনি করিডোর দিতে চাচ্ছেন। 

আপনি নির্বাচিত নন কিন্তু আপনি তো জনগনের ও রাজনৈতিক দলের সমর্থিত সরকার। এজন্য আপনাকে জনগণের সেন্টিমেন্ট অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যেখানে দেশ ও দেশের মানুষ বিপন্ন হতে পারে সেই ধরণের পদক্ষেপ নেয়া দুঃখজনক।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা কোথায় পালিয়ে আছে? পার্শ্ববর্তী দেশে। কিন্তু কোথায় আছে? সে কথা ওখানকার প্রধানমন্ত্রীও বলেনা, আর কেউও বলে না। শেখ হাসিনা হয়ে গেছে ওসামা বিন লাদেনের খালাতো বোন। 

ওসামা বিন লাদেন কোন ‍গুহায়, কোন পাহাড়ে থাকতো কেউ যেমন জানে না, মাঝে মাঝে ভিডিও বার্তা দিতো। ঠিক সেইভাবে শেখ হাসিনা এখন লাদেনের খালাতো বোন হয়ে ভিডিও বার্তা দেন। ওনার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, যে ঘটনায় উনি বলেছেন ২২৭টি হত্যা নিশ্চিত হলো। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা যার ফ্যাক্ট চেকিং করেছে, ফরেনসিক করে দেখেছে এটা সত্য এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য।

তিনি বলেন, যিনি কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ছিল, তিনি কীভাবে বলতে পারে যারা তার নামে মামলা দিয়েছে সেই ২২৭ জনের হত্যা নিশ্চিত হল। তিনি হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আপনি এতো শিশু, কিশোর, শ্রমিক, রিকশাওয়ালার রক্ত পান করার পরও আপনার তৃষ্ণা মেটেনি। এতো হত্যা, গুম, খুনের পরে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় আপনি তাদের জীবন কেড়ে নিতে চাইছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কবে করা যায় তার তারিখ সুনির্দিষ্ট করে বলুন।

তিনি বলেন, কোনভাবে যদি ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে তাহলে কেউ কিন্তু বাঁচতে পারবেন না। সুতরাং ঐক্যের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একত্রে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আকন কুদ্দুসুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন, এবায়দুল হক চাঁন, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ, জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খান, মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার, জেলা সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয়। এর আগে জেলা ও মহানগরের বিভিন্নস্থান থেকে খন্ড খন্ড মিছিল এসে সমাবেশে যোগদান করে।
Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال