" চাপে নেই বাংলাদেশ, নতুন রুটের খোঁজে ব্যবসায়ীরা "

চাপে নেই বাংলাদেশ, নতুন রুটের খোঁজে ব্যবসায়ীরা

 

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৫ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। বৈদেশিক মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৬২ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সময়ের মধ্যে ভারত হয়ে বিশ্বের ৩৬টি দেশে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টন (মোট ৩৪ হাজার ৯০৯ দশমিক ২০৬ টন) পোশাক।

বাংলাদেশ কাস্টমস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এই উপায়ে পণ্য পাঠিয়ে বাংলাদেশ যেমন সুবিধা পেয়েছে তেমনি ভারতও কাস্টমস চার্জ, বন্দর ব্যবহার ফি, রেল ও সড়কপথের টোলসহ বিভিন্ন খাত থেকে আয় করেছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব। সম্প্রতি ভারত সরকার এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাদের এই বড় অঙ্কের রাজস্ব আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ নয়, ভারতই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশ নয়, ভারতই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা / সংগৃহীত

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে ভারত শুধুমাত্র দক্ষিণ এশীয় লজিস্টিক হাবে পরিণত হয়নি বরং এর মাধ্যমে দেশটির অভ্যন্তরীণ বন্দরের সক্ষমতাও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর এবং রেলওয়ে করিডোর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন ভারতের রাজস্ব খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।


বিকল্প রুট খুঁজছেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা

গত ৮ এপ্রিল ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (সিবিআইসি) তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্য পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয়। এরপর দুই দিনে পাঁচটি ট্রাক ফিরিয়ে দিয়েছে দেশটি। এসব পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা সাময়িকভাবে হলেও কিছুটা সমস্যায় পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এখানে তেমন কোনো সমস্যা দেখছেন না।

গত ১০ এপ্রিল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশ বড় কোনো সমস্যায় পড়বে বলে মনে হয় না। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব অংশীজন, বিমান, সিভিল এভিয়েশন, প্রাইভেট সেক্টর সবার সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সমস্যা উত্তরণে কিছু অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে, কিছু বাড়তি খরচের বিষয় রয়েছে। আমরা কাজ করছি, আশা করছি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।’

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে কোনো সমস্যা বোধ করছি না
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন / সংগৃহীত

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ায় এখন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা বিকল্প রুট খুঁজছেন। ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার কিংবা নেপাল হয়ে রপ্তানি বাড়াতে পারে তারা। এর ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বাণিজ্য থেকে পাওয়া রাজস্ব পুরোপুরি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে ভারতের।


উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমন্বয় করে এগোতে পারলে চাপ কম হবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের একাধিক ব্যবসায়ী। জানতে চাইলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি আমাদের ব্যবসার ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে, ভারত বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাবে। কারণ, তারা আমাদের পণ্যের জন্য তাদের অতিরিক্ত কার্গো স্পেস বরাদ্দ রেখেছিল।’

phone
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমন্বয় করে এগোতে পারলে চাপ কম হবে— দাবি করেছেন একাধিক ব্যবসায়ী / সংগৃহীত

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটি কিছুটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, আমাদের অতিরিক্ত কার্গো আগে ভারতীয় বিমানবন্দরগুলো দিয়ে যেত। এখন কোন দেশ থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নেওয়া যায় তা বের করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বাফার সমন্বয়ের মাধ্যমে এটি সামাল দেওয়া সম্ভব। এখন আমাদের বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা উন্নত করতে হবে। ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এটির সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। একটি জাপানি কোম্পানি নতুন টার্মিনালের গ্রাউন্ড ও কার্গো অপারেশন পরিচালনা করবে, যা আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়াবে।’

dhakapost
ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা বাতিল করেছে ভারত / ফাইল ছবি

বিষয়টিকে কেবল নেতিবাচকভাবে না দেখে সম্ভাবনার দিক থেকেও ভাবার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিজিএমইএ-এর সাবেক পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।



তিনি বলেন, ‘হঠাৎ নেওয়া ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে সাময়িকভাবে কিছুটা নেতিবাচক আবহ তৈরি হয়েছে। এতে একদিকে আমরা সামান্য আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারি, অন্যদিকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আমাদের সক্ষমতাও কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। এই বিকল্প রুটটি আমাদের জন্য স্বল্প সময়ে পণ্য রপ্তানির একটা কার্যকর সুযোগ ছিল, যা এখন আর থাকছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিবর্তনের ফলে আমাদের সামনে নতুন রুট ও ভিন্ন কৌশল গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, ব্যবসায়িক স্বার্থে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় থাকবে, যা শেষ পর্যন্ত দুই দেশেরই কল্যাণে বয়ে আনবে।’

Previous Post Next Post

Random Manga

Ads

نموذج الاتصال